আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বৃহদায়তন ব্যবসায় পরিমণ্ডলে প্রচলিত সাংগঠনিক কাঠামোসমূহের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে ১৯৬০ সালের পর থেকে মেট্রিক্স সংগঠন কাঠামোর ব্যবহার শুরু হয় । এর পর থেকে আধুনিক বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানিসমূহে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে । এ ধরনের জনপ্রিয়তার পরও মেট্রিক্স সংগঠন সর্বত্র ব্যবহার করা যাচ্ছে তা নয় । এছাড়া বেশ কিছু অসুবিধাও এর কার্যকারিতাকে ক্ষেত্রবিশেষে বাধাগ্রস্ত করে । নিম্নে এরূপ সংগঠনের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. নির্বাহীগণের দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency of the executives) : এক্ষেত্রে প্রজেক্ট পর্যায়ে ও কার্যক্ষেত্রে নিযুক্ত ব্যবস্থাপকগণ যথেষ্ট কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ভোগ করেন এবং উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণের অনুমোদনসাপেক্ষে নিজেরাই অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন । ফলে নির্দিষ্ট প্রজেক্ট বা ব্যবসায় পর্যায়ের (Business level) নির্বাহীরা অধিক দক্ষতা অর্জন ও যোগ্যতা প্রদর্শনের সূযোগ পায় ।
২. সহযোগিতার উন্নয়ন (Developing co-operation) : এক্ষেত্রে অঞ্চল, প্রজেক্ট, দ্রব্য বা ব্যবসায়ের দায়িত্বে নিযুক্ত নির্বাহী যেমনি তার প্রজেক্টের জন্য উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহীর (CEO) কাছে দায়ী থাকেন তেমনি উক্ত প্রজেক্টের প্রতিটা কাজ সম্পাদনের জন্য কার্যভিত্তিক নির্বাহীগণ প্রজেক্ট নির্বাহীকে সহযোগিতা প্রদান করেন । ফলে ব্যবসায় পর্যায়ে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠে ।
৩. কার্যকর সমন্বয় প্রতিষ্ঠা (Establishing effective co-ordination) : মেট্রিক্স সংগঠন প্রতিষ্ঠানে সমান্তরাল সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। একটা প্রজেক্টকে কার্যিক ব্যবস্থাপকগণ পাশাপাশি থেকে সহযোগিতা করেন । উৎপাদন বিভাগের নির্বাহী সফল হলেও যদি বিপণন বিভাগের নির্বাহী সফল না হয় তবে সামগ্রিকভাবে প্রজেক্ট ব্যবস্থাপক দায়ী হয় এবং তার সাথে অন্যরাও সেজন্য ঊর্ধ্বতনের (CEO) নিকট দায়ী থাকে । ফলে বাধ্য হয়েই একে অন্যের সাথে কাজের সমন্বয় করে ।
৪. উচ্চ নির্বাহীগণকে সহায়তা দান (Providing assistance to chief executives) : এরূপ সংগঠনে উপরিস্তরের (Corporate level) নির্বাহীগণকে প্রজেক্ট লেভেল দেখার জন্য তেমন সময় ব্যয় করতে হয় না। উন্নত তথ্য প্রযুক্তির কারণে তার নিকট সকল প্রজেক্টের সর্বশেষ তথ্য থাকে । প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র তাকে প্রজেক্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান বা হস্তক্ষেপ করতে হয় । ফলে তাঁর বা তাঁদের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও নতুন নতুন উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয় ।
৫. প্রতিভা ও দক্ষতার সমন্বয় (Co-ordination between intelligence and efficiency) : এ ধরনের সংগঠন কাঠামোতে বহুমুখী প্রতিভা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা একত্রিত হয় । উন্নত প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রতিভা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগানো সহজ হয় । এতে যে কোন জটিল সমস্যা সহজে সমাধান করে এগিয়ে যাওয়া যায় ।
১. প্রশাসনিক খরচ বৃদ্ধি (Increasing administrative cost) : এরূপ সংগঠন কাঠামোতে কার্যভিত্তিক বিভাগীয় ব্যবস্থাপকগণের সাথে প্রতিটা প্রজেক্টের জন্য পৃথক ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্ট কর্মী কর্মরত থাকায় প্রশাসনিক ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।
২. দ্বৈত কর্তৃত্বের বিপদ (Danger of dual authority) : এরূপ সংগঠনে প্রজেক্ট ব্যবস্থাপক, কার্যভিত্তিক ব্যবস্থাপক এবং ক্ষেত্রবিশেষে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকগণ পাশাপাশি কর্মরত থাকেন । এতে কোনো সমস্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মতামত প্রদানে দ্বৈত কর্তৃত্বের সৃষ্টি হয় । যা ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যার সৃষ্টি করে ।
৩. দ্বন্দ্ব সৃষ্টি (Making conflict) : এ ধরনের সংগঠন কাঠামোতে একই সমান্তরালে কার্যভিত্তিক ব্যবস্থাপক ও প্রজেক্ট ব্যবস্থাপকগণ কাজ করায় একে অন্যকে কোনো নির্দেশ দিতে বা বাধ্য করতে পারে না । তাই কোনো কারণে একবার ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তা দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয় ।
৪. দলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যা (Problem in taking group decision) : এ ধরনের সংগঠনে একটা সাধারণ সিদ্ধান্ত নিতে গেলেও সমান্তরাল পর্যায়ে কর্মরত ব্যবস্থাপকগণ দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেন । প্রতিটা বিষয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যেয়ে ঝামেলার পাশাপাশি সময় নষ্ট ও নানান ধরনের জটিলতা লক্ষ করা যায় ।
৫. পরিবর্তনে সমস্যা (Problem in change) : এরূপ সংগঠনে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে হলে সে ধরনের সিদ্ধান্ত কর্পোরেট লেভেল বা উচ্চ পর্যায় থেকে নিতে হয় । সেক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো দুর্বলতা বা নিচের পর্যায়ের নির্বাহীগণের দক্ষতায় অভাব থাকলে এরূপ পরিবর্তনের সাথে দ্রুত সাড়াদান তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না ।